কাটিরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত
বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি বীর চট্টলার উত্তরাঞ্চলে নারীশিক্ষার প্রতিষ্ঠান মহিল ডিগ্রী কলেজ। কলেজটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের সন্নিকটে হাটহাজারী উপজেলার ছায়াঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ধলই গ্রামের কাটিরহাটে অবস্থিত। গ্রামের পূর্বসীমা রেখায় চির প্রবাহমান হালদা নদী, পশ্চিমে সবুজ অরণ্যে ভরা ঢালু পাহাড়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে মনোমুগ্ধকর করেছে। উত্তর দক্ষিনে চট্টগ্রাম নাজিরহাট রেলপথ ও চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি সড়ক। পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত সড়ক এবং পশ্চিম দিকে ফরহাদবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল উদালিয়া অতিক্রম করে ধলই বাড়বকৃন্ড সড়কের মিলনস্থল কাটিরহাট। এ জন্য ধলই, ফরহাদাবাদ, মির্জাপুর ও সমিতির হাট ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই এটি এতদাঞ্চলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। স্বাধীনতা সংগ্রামে ইই ফঞ্চলটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চারণভূমি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। শিক্ষা সংস্কৃতির অঙ্গনেও এ অঞ্চলটি বিশেষ গৌরবের দাবীদার। ইতোপূর্বে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কাটিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কাটিরহাট এম.আই. ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা।
১৯ ডিসেম্বও, ১৯৮৫ ইংরেজী এতদাঞ্চলের বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও মুক্তিযুদ্ধেও প্রখ্যাত সংগঠক মরহুম ডাঃ মাহমুদুল হক সাহেবের নেতৃত্বে মৃক্তিযুদ্ধেও চেতনায় উদ্বুদ্ধ এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্র্রতিষ্ঠিত হয় কাটিরহাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ।
গত শতাব্দীতে বিশ্বেও সর্বত্র আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ শুরু করে। সদ্য স্বাধীনতা অর্জনকারী আমাদের বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে নারী উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য প্রতীয়মান হয়। একথা অনস্বীকার্য যে, গত শতাব্দীর আশির দশকে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসের আঁখড়ায় পরিণত হয়। ফলে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের বিশেষত মেয়েদের দূরবর্তী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণে চিন্তিত হয়ে পড়ে। ফলে এস.এস.সি পাশ করার পর এতদাঞ্চলের অধিকাংশ মেয়েদেও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সুযোগ-সুবিধা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তুু উচ্চ শিক্ষার অভাবে এলাকর নারীসমাজ তা থেকে বঞ্চিত হয়।
এরূপ নাজুক পরিস্থিতি দেখে এ অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রাণপুরুষ মরহুম ডাঃ মাহমুদুল হক সাহেবের উদার হৃদয় ব্যথিত হয়। ফলে এলাকায় নারী শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে এই মহান ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় উদ্বুদ্ধ অনুসারী ও এলাকার যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে হৃদয়ে লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ গ্রহণ করেন।
কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ
কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জনাব ডাঃ মাহমুদুল হক কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মরহুম আবদুল ওদুদ সেরেস্তাদার হলে প্রথম সভা আহ্বান করেন। এতে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকার বিদ্যোৎসাহী লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রথম কলেজ পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়।
সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছ-বাঁশের খুঁটি ও ছনের ছাউনির ঘর তৈরী কওে কলেজ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৬-১৯৮৭ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক ও বিজ্ঞান শাখায় ছাত্রী ভর্তি ও যথারীতি শিক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব বজলুল করিম চৌধুরী। কলেজের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল করিম মহোদয়।
কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে জনাব এম.ওয়ালী আহাম্মদ মাষ্টার, জনাব সিরাজুল হক মাষ্টার, জনাব কাজী মোহাম্মদ মহসিন, জনাব অধ্যাপক আবু ছৈয়দ, জনাব মোহাম্মদ ইলিয়াছ (এম.এ), জনাব আবু হানিফ, জনাব মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, জনাব নুরুল আলম চৌধুরী, জনাব নুরুল হুদা শরীফ, জনাব মোহাম্মদ হারুণ, জনাব আবু তাহের তালুকদার, জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল, জনাব মাকসুদুর রহমান, জনাব জালাল আহম্মদ মাষ্টার, জনাব জানে আলম মাষ্টার, জনাব আবুল হোসেন ম্যানেজার, জনাব আবদুস সাত্তার (বি.কম), জনাব মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী, জনাব এজাহার মিয়া চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান), জনাব কাজী নজরুল ইসলাম চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান), জনাব আবুল কাশেম চৌধুরী (সাবেক চেয়ারম্যান), জনাব মাহাবুবুল আলম খান, জনাব আবু তাহের চৌধুরী, জনাব শফিউল আলম ছিদ্দিকী, জনাব জসীম উদ্দিন শরীফ, জনাব হুমায়ন কবীর চৌধুরী, জনাব নাদেরুজ্জামান, জনাব শফিকুল ইসলাম, জনাব মোহাম্মদ মূসা, জনাব খায়রুল হক, জনাব মাহাবুবুল আলম, জনাব আবদুল মাবুদ, আলহাজ্ব আমির আহাম্মদ সওদাগর, জসীম উদ্দিন সান্টু, জনাব গিয়াস উদ্দিন, বাবু ফণীভূষন মজুমদার, বাবু অশুতোষ দে, জনাব মোহাম্মদ সোলায়মান, জনাব নুরুচ্ছাফা, জনাব মাহাবুবুল আলম (মুক্তিযোদ্ধা), জনাব এস.এম.ফরিদ এবং এলাকাবাসীর অনেকেই।
কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং যথারীতি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে পাঠদান কার্যক্রম আরম্ভ হলেও কলেজের জন্য মহাসংকট রয়ে গেল সংশ্লিষ্ট বোর্ডেও স্বীকৃতির প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ, শিক্ষকদের বেতন ও দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্রী ভর্তি করা।
অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে এলাকাবাসীদের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। তার উদাত্ত আহ্বানে এলাকাবসী নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা প্রদান করেন। যে সকল বিদ্যেৎসাহী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান কলেজ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক এবং আনুষঙ্গিক সহযোগিতা করেছেন তাদের নিকট কলেজ কর্তৃপক্ষ চিরকৃতজ্ঞ এবং তাদের নাম কলেজের অনুদান তালিকা বোর্ডে লিপিবদ্ধ আছে।
বর্তমান কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য জনাব আলহাজ্ব সুলতান আহমদ ঐ সময়ে বিদেশে কর্মরত ছিলেন। তিনি এককালীন ৮,০০০ টাকা প্রদান করে প্রাথমিক খরচ মেটাতে বিশেষ সহায়তা করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন কিস্তিতে সর্বমোট ৫২,০০০ টাকা প্রদান করেছেন। ১৯৮৫ইং থেকে ১৯৯৩ইং সনের জুনমাস পর্যন্ত সরকারি অনুদান ব্যতীত শুধু জনসাধারনের চাঁদার উপর ভিত্তি করে কলেজ পরিচালনা করতে হয় বিধায় প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে অত্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ দুর্দিনে হযরত শাহাজাহান খান (রঃ) মাজার শরীফ কমপ্লেক্স পরিচালনা পরিষদ প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ দিয়ে কাটিরহাট বাজার কলেজের নামে লীজ নেয়রার বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক এ কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। অবশ্য এই ক্ষেত্রে কলেজের হিতৈষী প্রতিনিধ জনাব শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল।
এ সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্রী ভর্তিও জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধলই, ফরহাদাবাদ, সমিতিরহাট ও মির্জাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। কেননা, অনেক অভিভাবক সন্দিহান ছিলেন যে, কলেজটি আদৌ টিকে থাকবে কিনা। ফলে তারা নিজেদের পোষ্যকে এ কলেজে ভর্তি করাতে উদাসীনতা প্রদর্শন করেন। সম-সাময়িক কলেজের জন্য আরেকটি মহাসংকট ছিল সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লার স্বীকৃতি আদায় করা। এ উদ্দ্যেশ্যে বোর্ড কর্তৃপক্ষেও সাথে যোগাযোগ করা হলে কলেজ পরিদর্শক সাহেব জানান যে, সরকারি বিধি মোতাবেক কলেজ নিজস্ব জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং কলেজের নামে নির্ধারিত পরিমাণ জমি থাকতে হবে, নতুবা বোর্ড স্বীকৃতি পাওয়া যাবে না।
তাই কলেজটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বর্তমানে যেখানে অবস্থিত সে জায়গায় স্থনান্তর করা হয়। বর্তমান কলেজ ক্যাম্পাসে এবং এর বাহিওে কলেজের স্বীকৃতির জন্য অনুদান হিসেবে জমি প্রদানকারী মহৎ ব্যাক্তিরা হলেন- মরহুম নুরুল হক চৌধুরী গং, মরহুমা রবিজা খাতুন, জনাব আবুল বশর চৌধুরী। জমি এওয়াজ করে কলেজ ক্যাম্পাস সম্প্রসারণে সহায়তা করেছেন কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ। প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এবং এলাকাবসীর বিশেষত যুব সমাজের অক্লান্ত পরিশ্রমে সরকারি স্বীকৃতির শর্ত পূরন হয়। কিন্তুু সমসাময়িক ক্ষমতাসীন সরকার আইন করে যে, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করলে সরকারি স্বীকৃতি পাবে বটে, তবে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অনুদান পাবে না। ফলে ১৯৮৮ ইং বোর্ডের অনুমতি এবং ১৯৮৯ ইং স্বীকৃতি লাভ করেও কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারীবৃন্দ সরকার প্রদত্ত বেতন-ভাতা এবং কলেজটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।
কলেজ ফান্ডে টাকা না থাকায় শিক্ষকদের নামমাত্র সন্মানী তাও যথাসময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হতো না। অর্থের অভাবে বিজ্ঞান শাখার ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় অসম্ভব ছিল। একপর্যায়ে কাম্য সংখ্যক ছাত্রী না থাকায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞান শাখার স্বীকৃতি বাতিল করে। শুধু উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক শাখা নিয়ে কলেজ কার্যক্রম চলতে থাকে। ১জুলাই,১৯৯৩ইং থেকে সরকার এ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য অনুদান মঞ্জুর করে। ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রথম দ্বিতল একাডেমিক ভবনটি নির্মাণ করে। ভবনটি নির্মাণের অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সকলের নিকট কৃতজ্ঞতা রইল। ১৯৯৫-১৯৯৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক শাখার থেকে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু করা হয়। ফলে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে পরিণত হয়। ছাত্রীসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করার পর কলেজটি স্নাতক পর্যায়ে উন্নীত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (পাস) কোর্স অধিভুক্তি লাভ করে। এক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি মহোদয় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
১৮ই অক্টোবর, ১৯৯৮ইং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ডাঃ মাহমুদুল হক এলাকাবাসীদের চোখের জলে ভাসিয়ে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। পিতার স্বপ্ন পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য তাঁর সুযোগ্য পুত্র লেঃ জেনাঃ এম. হারুন-অর-রশিদ বীর প্রতীক (অবঃ) মহোদয় বলিষ্ঠ হাতে কলেজের হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি কলেজ পরিচালনা পরিষদে সন্মানিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করিতেছেন। বর্তমান সভাপতি মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৮ শতক জমি ক্রয় ও উক্ত জায়গার উপর ৫তলা ভীত বিশিষ্ট দ্বিতল একাডেমিক ভবনটি ২০০০-২০০১ অর্থবছওে শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মিত হয়। তাছাড়া কলেজের প্রাণকেন্দ্র কলেজ গ্রন্থাগারের জন্য এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে মূল্যবান অসংখ্য পুস্তক এবং কম্পিউটার বিষয়ে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কম্পিউটার অনুদান হিসেবে পাওয়া যায়। ছাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শ্রেণীকক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় একাডেমিক ভবনটি সম্প্রসারনের জন্য ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর নিকট থেকে ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকার অনুদান পাওয়ার ব্যবস্থা করেন যা দ্বারা একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগারকে অত্যাধুনিক ও মানসম্মতভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ইঞ্চিঃ চৌধুরী মোহাম্মদ মহসিন ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট এর নিকট থেকে ২(দুই) লক্ষ টাকার অনুদান মঞ্জুর করিয়ে দেন।
প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের একনিষ্ঠ সহকর্মী জনাব এম.ওয়ালী আহমদ মাষ্টার কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে পরিচালনা পরিষদের সন্মানিত সভাপতি, পরবর্তীতে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে আন্তরিক সহযোগিতা করেন। পরিচালনা পরিষদের হিতৌষী জনাব শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যবধি কলেজের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে কলেজের সার্বিক কল্যাণে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কলেজের দুর্দিনে জনাব আবু হানিফ অত্যন্ত কষ্টের মধ দিয়ে পরিচালনা পরিষদের সম্পাদকের কঠিন দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমান কলেজ পরিচালনা পরিষদের সন্মানিত সদস্য জনাব ক্যাপ্টেন মোঃ আজিজুল হক, এক্সট্রা মাষ্টার (লন্ডন) এফ.এন.আই (ইউ কে), প্রাক্তন এমডি (সি.এস-সি) ও প্রাক্তন কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী, কলেজ উন্নয়নে ১(এক) লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। তাছাড়াও কলেজ উন্নয়নে যে সকল মহৎপাণ ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক বা বস্তুুগত অনুদান প্রদান করেছেন তারা হলেন- জনাব শফিউল আলম, জেল রেজিষ্টার (অবঃ), বাবু শচীন কর্মকার (আমেরিকা প্রবাসী), জনাব ইফতেখার উদ্দীন আহমদ (চেয়ারম্যান, রাজ ওভারসীজ), জনাব আবদুল হাই (খুলশী), জনাব কাজী মোজাম্মেল হক (ঢাকা), বাবু সর্বজিত চক্রবর্তী (ঢাকা), জনাব এম.এ.সবুর (্এনায়েতপুর), যে সকল সংস্থা ও প্রতিষ্টান কলেজের সার্বিক কল্যাণে অবদান রেখেছেন তন্মধ্যে কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ, হযরত শাহজাহান শাহ (রঃ) মাজার শরীফ কমপ্লেক্স পরিচালনা পরিষদ, এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইঞ্জিঃ চৌধুরী মোঃ মহসিন ফাউন্ডেশন, ফর হিউম্যান রিসোর্সেস এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কাটিরহাট ক্রীড়াচক্র, এনায়েতপুর গণ পাঠাগার এবং ডেসটিনি-২০০০ লিঃ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসনিক আনুকূল্য পেতে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তারা হলেন-
জনাব ওবায়দুল হক, চীফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী, জনাব দিদারুল আনোয়ার, সচিব (অবঃ), জনাব সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, (সাবেক এম.পি), জনাব মীর মোঃ নাছির উদ্দীন (সাবেক মন্ত্রী)।
বর্তমানে এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় বাংলা, ইংরেজী, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার শিক্ষা, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি, পৌরনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, যুক্তিবিদ্যা, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ে পাঠদান করা হয়।
স্নাতক পর্যায়ে বি.এ; ব.এস.এস এবং বি.এস.সি পাস কোর্সে বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজজ্ঞিান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষাদান চলছে।
তাছাড়া কর্মমূখী শিক্ষা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে কলেজ শিক্ষার্থী এবং এলাকর বেকার যুব সম্প্রদায়ের জন্য অপরাহ্নে (কলেজ ছুটির পর) কম্পিউটার শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়েছে। চাকুরীজিবী এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এইচ.এস.সি প্রোগ্রাম টিউটোরিয়াল কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।
পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল পার্শ্ববর্তী যে কোন কলেজের চেয়ে অধিক ভাল। বিগত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৭১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৯ জন উত্তীর্ণ হয়। পাসের হার ৮২%। এবং স্নাতক পাস পরীক্ষায় ৪৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩জন প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় এবং পাসের হার ৯০%।
শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিক অঙ্গনেও কলেজটি কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রেখে চলেছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান দখল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ এর গৌরব অর্জন করেছে।
কলেজের গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি উপবৃত্তি, বোর্ড বৃত্তি, জেলা পরিষদ বৃত্তি প্রদান করা হয়। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের প্রাণপ্রিয় পতœী, রতœগর্ভা মহীয়সীর নামে তাঁর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বর্তমান সভাপতি মহোদয় প্রদত্ত ”জরিনা স্মৃতিবৃত্তি”, ইঞ্জিনিয়রার চৌধুরী মোঃ মহসিন ”ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বৃত্তি” এবং বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব হারুন-অর-রশীদ প্রদত্ত ” চেয়ারম্যান স্মৃতি বৃত্তি” শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
এলাকার নারী শিক্ষা প্রসারে স্মরনীয় অবদান রেখে কলেজ সংশ্লিষ্ট সকলকে শোকাহত করে যারা চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন তারা হলেন- মরহুমা রবিজা খাতুন, জনাব আব্দুল সাত্তার (বি.কম), জনাব আলহাজ্ব নুরুল হক চৌধুরী, জনাব জসীম উদ্দিন সান্টু, জনাব আবদুল মাবুদ এবং জনাব এম.এ. সবুর। মহান করুণাময়ের দরবাওে তাদের সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামন করছি।
১৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ইং প্রতিষ্ঠিত কলেজটি অনেক প্রতিকুলতা অতিক্রম কওে বর্তমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত স্নাতক (পাস) কলেজে উন্নীত হয়েছে। ইতিমধ্যে কলেজটির যশ-খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সকলের একান্ত প্রত্যাশা বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সুযোগ্য নেতৃত্বে উত্তরোত্তর কলেজটি উন্নতির শীর্ষবিন্দুতে আরোহণ করবে।